ক্ষণিকের বিলাস
সমাজ বাস্তবতার অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় হলো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর উত্থান পতন। ক্ষণিকের বিলাস আজীবনের লালিত সম্ভাবনাকে শ্বাস রোধ করে। এরকম একটি উদাহরণ কাজী ইমদাদুল হকের কালজয়ী উপন্যাস 'আব্দুল্লাহ'তে পাওয়া যায়। প্রায় শত বছর পরেও বিষয়টি আরো বেশি বাস্তব হয়ে উঠেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উপন্যাসটি পড়ে সুচিন্তিত মন্তব্য করেছিলেন মুসলমান সমাজ সম্পর্কে। 'আব্দুল্লাহ' উপন্যাসের এ অপ্রধান অনুষঙ্গের কিছুটা উদ্ধৃতি দেয়া হলো।
![]() |
Photo Credit: https://www.amarboi.com/2015/12/abdullah-by-kazi-imdadul-hoque.html |
মদনের অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। তাহার খামার জমিগুলির মত উর্বরা জমি এ অঞ্চলে আর কাহারো ছিল না। গোলাভরা ধান, গোয়াল-ভরা গরু, ছাগল এবং উঠান-ভরা মোরগ-মুরগি লইয়া সে বেশ সুখে-স্বচ্ছন্দে দিনপাত করিত। তাহার জমিতে পাটও জন্মিত এবং তাহা হইতে রাশি রাশি কাঁচা টাকা পাইয়া সে কৃষকমহলে খাতির যথেষ্ট জমাইয়া তুলিয়াছিল। কাজেই জ্যেষ্ঠপুত্র সাদেকের বিবাহের সময় পাঁচজন জ্ঞাতি-কুটুম্ব একত্র হইয়া ধরিয়া বসিল, খুব ধুমধাম করা চাই, দু-চারখানা গ্রামের লোক খাওয়াইতে হইবে, বাজি বাজনা, জারি-কবি, এসবের বন্দোবস্ত করিতে হইবে, নহিলে শুধু মদন গাজীর কেন, পলাশডাঙ্গার শেখেদের কাহারো মান থাকিবে না।...
প্রথমটা মদনের এসবে বড় মত ছিল না; কিন্তু পাঁচজনের উৎসাহে সেও নাচিয়া উঠিল। পুত্রের বিবাহে বিস্তর টাকা ব্যয় করিয়া ফেলিল। সুতরাং বেশ রকমের একটা দেনাও তাহাকে ঘাড় পাতিয়া লইতে হইল। আর মদনের মতো সম্পন্ন গৃহস্থকে কেই-বা না বিনা বাক্যব্যয়ে টাকা ধার দিবে।...তাই পাঁচজনে বলিল, ও দেনার জন্য কিছু ভয় নেই মদন। খোদা তোমাকে যেমন দিতে আছেন, তাতে ওই কটা টাকা পরিশোধ কত্তি আর কদ্দিন?... ...টাকা আর পরিশোধ হইল না।.....মদনের খামার জমিগুলি নিলাম হইয়া গেল...''
***মদন গাজীর বাড়ি, বাগান সব শেষ হয়ে পথে দাঁড়ানোর অবস্থা হয়। তিলতিল করে গড়ে তোলা সুখের ঘরে কীভাবে ক্ষণিকের বিলাস ধ্বংস ডেকে আনে তা অল্প করে হলেও কাজী ইমদাদুল হক 'আব্দুল্লাহ'তে দেখিয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন