তুমি শ্বশুরবাড়ি যাবে?
আত্মীয় কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতা বহুমুখী ও ঐতিহাসিক একটি ঘটনা। হাবিল-কাবিলের ভ্রাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব শুনে যার পরিচয় পাওয়া যায় মানবজন্মের শুরু থেকে। সব ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি ব্যবচ্ছেদ করতে হচ্ছে এখানে। শ্বশুরবাড়ি আদরের জায়গা-এ বিশেষণের আড়ালেও ঘটে ঘৃণ্য সব ঘটনা। এখানে বাংলা সাহিত্যে সমাজের এই অপ্রকাশিত দিকটির প্রকাশের দু-একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
১
মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের কালজয়ী উপন্যাস 'আনোয়ারা'তে এক পর্যায়ে আনোয়ারার বর নুর ব্যবসার পুঁজি সহ শ্বশুরবাড়ি রাত্রিযাপন করে। আনোয়ারার সৎ মা ও বাবা লোভে অন্ধ হয়ে রাতের অন্ধকারে জামাতাকে জবাই করার পরিকল্পনা করে। নিয়তির পরিহাসে নুরের বালক শ্যালক তার জায়গায় শুয়ে খুন হয়। না জেনে বস্তাবন্দী ছেলের লাশ অন্ধকারে ভাসিয়ে দেয় হতভাগ্য শ্বশুড়-শাশুড়ি।
২
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিখ্যাত গল্প 'পদ্ম-গোখরো'তে জোহরার বাবা-মা ঘুমন্ত জামাতাকে তরবারি ধরে মেয়েরই অলংকার ডাকাতি করে। টের পেয়ে সকালে বাড়ি রওয়ানা হলে বিষ দিয়ে হত্যা চেষ্টা করে। ভাগ্যের খেলায় বেঁচে যায় আরিফ। আরিফের ভাষ্যে নজরুল বলেছেন 'এত কুৎসিত এ পৃথিবী!' জোহরার জবানে মাকে বলেছেন ‘রাক্ষুসি!’ ডাকাতির অর্থে মক্কা যাওয়ার পথে কলেরায় মারা যায় জোহরার মা। অনুতপ্ত (!) বাবা পথ থেকে ফিরে মেয়েকে একটিবার দেখতে গিয়ে গোখরোর ছোবলে প্রাণ হারায়।" অবশ্য পদ্ম-গোখরোও মারা যায় তার লাঠির আঘাতে।
৩
![]() |
Photo Credit: https://www.kalerkantho.com/print-edition/education/2018/03/01/607966 কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিয়ালা গল্পে মিনি ও রহমতের কথোপকথনের চিত্রায়ণ। |
শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাবুলিওয়ালা গল্পের সংলাপ জুড়ে দিলাম।... "রহমত মিনিকে বলিত, “খোঁখী, তোমি সসুরবাড়ি কখুনু যাবে না!”...সে উল্টিয়া জিজ্ঞাসা করিত, “তুমি শ্বশুরবাড়ি যাবে?”
রহমত কাল্পনিক শ্বশুরের প্রতি প্রকাণ্ড মোটা মুষ্টি আস্ফালন করিয়া বলিত, “হামি সসুরকে মারবে।”...
রহমত গ্রেফতার হওয়ার কালে "মিনি একেবারেই তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি শ্বশুরবাড়ি যাবে ?”
রহমত হাসিয়া কহিল, “সিখানেই যাচ্ছে।” দেখিল উত্তরটা মিনির হাস্যজনক হইল না, তখন হাত দেখাইয়া বলিল, “সসুরাকে মারিতাম, কিন্তু কী করিব, হাত বাঁধা।”...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন