বিশ্বাস ও বিনয় (২০২০)

Jhalokathi, Bangladesh.

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সবচেয়ে সুন্দর সে। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, ''আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।'' (আল কুরআন)

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, কৃষ্ণ-শেত, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ছাড়িয়ে মানুষই সুন্দর। মানুষের জন্য 'বিনয়' সুন্দর, 'অহংকার' নয়। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন,
''সে কি মনে করে যে, তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না?'' (আল কুরআন)
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে আমাদের বিশ্বাস অনেকক্ষেত্রে আমাদেরকে অহংকারী করে তুলেছিল। কিংবা আমরা কখনো কখনো কোনো কোনো দেশের উপর 'গজব' আসুক, সেটা চাই। বিপদ এলে বলি ওদের ওপর 'গজব' এসেছে। এর পাশাপাশি অন্য একরকম বিশ্বাসও আমাদের আছে। নিজেদের উপর বিপদ এলে আমরা সেটাকে 'পরীক্ষা' হিসেবে নেই। ভালো কথা। কিন্তু 'গজব'-এর ধারণা একটু অন্য রকম হওয়া উচিত। বিশ্বাসের ভিন্নতায়, কিংবা অবিশ্বাসের কারণেই কী কাউকে নিশ্চিহ্ন করা হয়? আর সেটা কি পুরো দেশ কিংবা জাতিকে? আমি মনে করি না। কারণ যখন ফেরাউন ডুবে মরলো, তার সঙ্গী সাথীরাও অবশ্য তার সাথেই ডুবেছে। কিন্তু যারা অহংকারী হয়ে ফেরাউনের সাথে লোহিত সাগরে অসহায় মানুষদের ধাওয়া করেছে তারাই মরেছে। যারা সীমা অতিক্রম করে লোহিত সাগরে নেমেছে তারাই ডুবেছে, 'গজব' গ্রাস করেছে তাদের। কিন্তু যারা ধাওয়া করেনি, সীমা অতিক্রম করেনি, তারা ডুবেনি।
আবার, অনেক ক্ষেত্রে বিপদ সবাইকে গ্রাস করে। ভারত চন্দ্র বলেছেন, "নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?"
হ্যাঁ। অনেক ক্ষেত্রে অনেক জাতিই ধ্বংস হয়েছে। কখনো কখনো আত্মকেন্দ্রিক তাপসরাও রেহাই পাননি। রেহাই পাননি আদম সন্তান, নুহ্ নবীর ছেলে কিংবা লুত নবীর স্ত্রী। মধু কবি বলেছেন,
''মহাঘাতে মড়মড়ি
রসাল ভূতলে পড়ি
হায়, বায়ুবলে
হারাইল আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে!''
অন্যদিকে, মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা আবু তালিব-এর কথা স্মরণ করতে হয়। যিনি মুহাম্মদ (সা.) কে বাঁচাতে নিজে হেনস্থা হয়েছেন! নবদিক্ষিত মুসলিমদের সাথে নির্বাসন বরণ করেছেন। সেটা কি তার জন্য গজব ছিল? রাসুল (সা.) কি কখনো তার চাচার অমঙ্গল চেয়েছেন? শেষ পর্যন্ত উভয়ে উভয়ের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা বজায় রেখেছেন। এমনকি আবু তালিব মারা যান যে বছর, সে ছিল রাসুল (সা.)-এর দু:খের বছর।
মহামারি এখন বৈশ্বিক রূপ পেয়েছে। বিশ্ব মানবতার জন্যই বিপদ। কবি বলেছেন,
''দাবানল যবে বনস্পতিরে দগ্ধ দাহনে দহে,
শুষ্কপত্র আর্দ্র-পত্রে কোনও না প্রভেদ সহে।''
এটা মনে করার কারণ নেই যে, আমাদের অহংকার আমাদের বাঁচাবে। বরং বিনয়ী, সহানুভূতিশীল হলেই বিশ্ব মানবতা বেঁচে থাকবে। নুহ্ নবীর নৌকায় না চড়েও যে বুড়ি তার বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে ছিল, তার রহস্য নুহ্ নবীর কাছেও বিস্ময়! সৃষ্টিকর্তার পরিবার এ বিশ্ব চরাচর। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
''হে চির সুন্দর, বিশ্ব চরাচর তোমারি মনোহর রূপের ছায়া।''
তারপরও বিশ্বাস আমাদের সান্ত্বনা দেয়। অভাবে, রোগে, শোকে, দু:খে, দুর্দশায় আমরা আশাহত হই না।
সর্বোপরি, সত্যধর্ম আসে আলো নিয়ে। বিশ্ব চরাচরকে আলোকিত করতে। সকল অন্ধকার, বিপদ, বিভীষিকা থেকে বিশ্ব মানবতাকে বাঁচাতে। আমাদের বিশ্বাস আমাদের বিনয়ী করে। উদ্ধত অহংকারীকে সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন না। জালালউদ্দিন রুমী বলেছেন,
''The same wind that uproots trees makes the grasses shine.''

*লেখক-মোঃ ফেরদৌস আলম, 
সাবেক শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জেরুজালেমের নবি যেরেমিয়া ও জলবায়ু সতর্কতা

শকুন ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্ববিচার

একটি জাতীয়তাবাদী নাটিকা : বাংলা ও বালআমের গাধা