পোস্টগুলি

মে, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বাংলা সাহিত্যে বিস্ময়কর হাফিজ!

ছবি
Photo credit: https://itto.org/iran/attraction/hafezieh-shiraz/ বিশ্বনন্দিত রহস্যপ্রেমী মহান সূফী কবি হাফিজ ফার্সি ভাষী বিশেষ করে ইরানীদের ঘরে ঘরে আজও চর্চিত হন গভীর ভালোবাসায়। পারস্যের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রায় সব প্রধান ভাষায় অনুদিত হয়েছে হাফিজের সৃষ্টিকর্ম। মহাকবি গ্যেটে সহ বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিকেরা হাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। কিন্তু জীবদ্দশায়ই হাফিজ জয় করেছিলেন বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের মন। শাসনকালের প্রাথমিক পর্যায়েই হাফিজকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান গুণমুগ্ধ সুলতান। দুঃখজনকভাবে ইচ্ছা থাকলেও কবি আসতে পারেননি সোনারগাঁওয়ে। বৃদ্ধ কবি বাংলাদেশে আসতে না পারলেও বাংলার রাজদূতকে তার বাদশার জন্য কবিতা লিখে পাঠান। সৈয়দ মুজতবা আলী তার আফগানিস্তান পর্বের বিখ্যাত উপন্যাস 'শব্নম্'-এ হাফিজের বারংবার উল্লেখের এক পর্যায়ে এ কবিতাটিও উল্লেখ করেছেন।  ‘'হেরো, হেরো, বিস্ময়। দেশ কাল হয় লয়! সবে কাল রাতে জনম লইয়া এই শিশু কবিতাটি রওয়ানা হইল পাড়ি দেবে বলে এক বছরের ঘাটি।’' হাফিজের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে অল্পই জানা যায়। বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, বর্তমান মধ্য ইরানের ইস্পাহান শহরের ...

শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তারের সূফী সাহিত্য সুধা

ছবি
Photo credit: https://sites.bu.edu/conferenceofthebirds প্রখ্যাত সূফী শেখ ফরিদ-উদ্-দ্বীন আত্তার সূফী সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা। ফার্সি সাহিত্যের স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রাণপুরুষ তিনি। আজও বিশ্বব্যাপী জ্ঞানপিপাসু রহস্যানুসন্ধ্যানী চিন্তাশীলদের নিকট বরণীয় এ মহাপুরুষ।  আত্তারের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়ে অনেক মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। প্রায় হাজার বছর আগে জন্ম নেয়া এ মহাপুরুষ জীবনকালে হয়তো সেই অর্থে জনপ্রিয়তা লাভ করেননি। উল্লেখযোগ্য মতে তিনি ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন (১১৪৫-১২৪৬ খ্রিস্টাব্দ)। তার জীবন সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে খুব অল্পই জানা যায়। তার পূর্ণ নাম ফরিদ-উদ্-দ্বীন আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি 'আত্তার' নামেই বেশি পরিচিত যার অর্থ 'সুগন্ধিওয়ালা'। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, একদিন আত্তার তার দোকানের দরজায় এক বন্ধুর সাথে বসেছিলেন। এমন সময় একজন দরবেশ সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দোকানের ভিতরে দেখলেন এবং সুঘ্রাণ অনুভব করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কান্না জুড়ে দিলেন। সে হয়তো করুণা জাগাতে চেষ্টা করছে এই ভেবে আত্তার তাকে চলে যেতে বললেন। দরবেশ বললেন, অবশ্যই, তোমার দরজা ...

অসহায় দিল্লি ও আবেগের ইতিহাস (২০২০)

ছবি
Photo credit: https://historicaltimeofindia.blogspot.com ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণহানীর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ দিল্লির পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের। ভারতে ক্ষমতাসীনদের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের জেরে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। বাবরী মসজিদ নিয়ে গেরুয়া রাজনীতির অনেক হলো। এরপর চলমান আন্দোলনের মুখে দেশটিতে মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করা স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে মন্তব্য করার জন্য একটু ইতিহাস পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ভারতে মুসলিমরা রাজা ও প্রজা দুই অবস্থাতেই ছিল। মুসলিম শাসনের অবসানে ব্রিটিশ আমলে 'Divide and Rule' নীতির কারণে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক ভিন্ন রূপ পায় 'জালিয়ানওয়ালায় যে পথের শুরু'। আহমদ ছফা তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, '...উপমহাদেশে যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা রয়েছে তার শতকরা আশিভাগ দুটি মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটেছে। একটি হলো গরু জবাই এবং অন্যটি মসজিদের সামনে বাজনা বাজানো।' আমার নিজ জেলা ঝালকাঠিতে কুলকাঠি গণহত্যা হিসেবে পরিচিত ১৯২৭ সালের এক ঘটনায় একটি মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে গুর্খা পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৯ জন মুসলমান। যাহো...

বিশ্বাস ও বিনয় (২০২০)

ছবি
Jhalokathi, Bangladesh. মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সবচেয়ে সুন্দর সে। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, ''আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।'' (আল কুরআন) ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, কৃষ্ণ-শেত, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ছাড়িয়ে মানুষই সুন্দর। মানুষের জন্য 'বিনয়' সুন্দর, 'অহংকার' নয়। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, ''সে কি মনে করে যে, তার উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না?'' (আল কুরআন) বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে আমাদের বিশ্বাস অনেকক্ষেত্রে আমাদেরকে অহংকারী করে তুলেছিল। কিংবা আমরা কখনো কখনো কোনো কোনো দেশের উপর 'গজব' আসুক, সেটা চাই। বিপদ এলে বলি ওদের ওপর 'গজব' এসেছে। এর পাশাপাশি অন্য একরকম বিশ্বাসও আমাদের আছে। নিজেদের উপর বিপদ এলে আমরা সেটাকে 'পরীক্ষা' হিসেবে নেই। ভালো কথা। কিন্তু 'গজব'-এর ধারণা একটু অন্য রকম হওয়া উচিত। বিশ্বাসের ভিন্নতায়, কিংবা অবিশ্বাসের কারণেই কী কাউকে নিশ্চিহ্ন করা হয়? আর সেটা কি পুরো দেশ কিংবা জাতিকে? আমি মনে করি না। কারণ যখন ফেরাউন ডুবে মরলো, তার সঙ্গী সাথীরাও অবশ্য তার সাথেই ডুবেছে। কিন্তু যারা ...

মানবাধিকার ও কিছু কথা

ছবি
Photo credit: https://www.un.org/en/udhrbook/(Illustrated by YAK) দেশ গঠনে নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড না থাকায় হয়েছে নানা অনাসৃষ্টি। কোথাও বড়, কোথাও ছোট; জনসংখ্যার ঘনত্ব কোথাও বেশি, কোথাও কম। কোথাও ধর্মের ভিত্তিতে, কোথাও ভাষার ভিত্তিতে, কোথাও নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের ভিত্তিতে। কখনও বিশ্বযুদ্ধ বা যুদ্ধ এই অনাসৃষ্টিতে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। জয়-পরাজয়, শান্তি-অশান্তি সবই মানুষের। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এই একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষের বাঁচার দাবি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সত্য হয়ে আছে। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ''সব মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং তাদের মর্যাদা ও অধিকার সমান।'' সব মানুষ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ। মানুষের বিচিত্র অধিকার একের পর এক বর্ণনা করা হয়েছে ১৯৪৮ সালে ঘোষিত মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে। এর আগেও মানবাধিকারের ধারণা ছিল। মানুষের অধিকার ছিল। অধিকারের লঙ্ঘনও ছিল। মানুষের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা বিভিষীকার নিষ্ঠুর মানদণ্ড হয়ে রয়েছে। যাহোক, বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার বিতর্কে যেসব অঞ্চল আলোচনায় এসেছে সেসবের দিকে দৃষ্টিপাত করলে ...